তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম । নিয়ত আরবি-বাংলা-মোনাজাত-ফজিলত

0
15

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম -কানুন বাংলা নিয়ত, আরবি নিয়ত, তাহাজ্জুদের নামাজ কয় রাকাত, সময়, তাহাজ্জুদের নামাজ নফল নাকি সুন্নত, নামাজের ফজিলত তা যদি নামাজে কোন সূরা পড়তে হয় ? কখনো ওয়াক্ত শুরু হয় ?  তাহাজ্জুদ নামাজ সংক্রান্ত সকল আলোচনা janobd.com ওয়েবসাইট এর এই পোস্টে।

Table of Contents

তাহাজ্জুদ নামাজ কি । তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ আরবি শব্দ যার বাংলা অর্থ ঘুম থেকে জাগা। তার জন্য নামাজ বা রাতের নামাজ হচ্ছে একটু নফল ইবাদত, ফরজ নামাজের পর অন্যান্য সুন্নত অন্য  সব নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফজিলত সবচেয়ে বেশি।

বিশ্ব নবীর প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে তাহাজ্জুদের নামাজ বাধ্যতামূলক তথাপি ফরজ ছিল। তাই জীবনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকেন নাই। তবে আমাদের জন্য এটা সুন্নতে গায়রে মক্কাদা অর্থাৎ নামাজ আদায় করলেও অশেষ ফজিলত লাভ করা যায় কিন্তু আদায় না করলে কোন প্রকার গুনাহ হবে না।

তাহাজ্জুদের নামাজ কিভাবে পড়তে হয় ? । তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

সহজ কথায় তাহাজ্জুদের নামাজ এর মধ্যে আলাদা কোন সূরা বা নিয়ম নেই, নিয়তের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করে অন্যান্য দুই রাকাত নফল নামাজের মত পড়লে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় হয়ে যাবে।

যারা একেবারেই তাহাজ্জুদের নামাজের নতুন তাদের জন্য আরও বিস্তারিত আলোচনা আসছে সামনে।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবি । তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

যারা আরবি পড়তে জানেন না তাদের জন্য আরবি না নিয়ত না করাই উত্তম। কারণ তারা সঠিক আরবি ব্যাকরণ না জেনে ভুল আরবিতে নিয়ত করলে নিয়ত  অশুদ্ধ থাকবে। যার ফলে নামাজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যারা সম্পূর্ণ আরবী পড়তে পারেন তাদের জন্য আরবি নিয়ত নিচে দেওয়া হল।

نويت ان اصلي لله تعالى ركعتي تهجد الله اكبر

তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত । তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

সহজে এভাবে নিয়ত করা যায়: দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজের নিয়ত করলাম আল্লাহু আকবার।

এভাবে নিয়ত করা যায়: কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করলাম আল্লাহু আকবার।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ

নাওয়াইতু-আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা,

রাকাতাই সালাতুল তাহাজ্জুদি সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তায়ালা,

মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি,

আল্লাহু আকবর।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় । তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজ রাতের শেষ তৃতীয় অংশে পড়া উত্তম। তাহাজ্জুদ নামাজের মূল সময় হলো রাত দুইটা থেকে শুরু হয়ে ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত থাকে। তবে ঘুম থেকে না জাগার সম্ভাবনা থাকলে এশারের নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নত এরপর দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে নেওয়া জায়েজ আছে এরপরে বেতের পড়ে নেবে। তবে রাতের শেষ অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া সর্বোত্তম, 

তাহাজ্জুদ নামাজের মোনাজাত । তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে কেউ দোয়া করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সে দোয়া কবুল করে নেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গভীর রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের জন্য পড়তেন কোরআনের এই আয়াত সমূহ সুরা আল ইমরানের শেষ পর্যন্ত পড়তেন। (বোখারী ও মুসলিম ,মিশকাত শরীফ)

তাহাজ্জুদ নামাজের মোনাজাত

তাহাজ্জুদ নামাজের মোনাজাতের অর্থ:

হে আমাদের প্রতিপালক! এইসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। পবিত্রতা তোমারই জন্য। আমাদের তুমি জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচাও। হে প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি যাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করো তাকে অপমানিত করো।

হে আমাদের প্রভু! আমরা ঈমান আনার জন্য একজন আহবানকারীকে আহবান করতে শুনে ঈমান এনেছি।

হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দাও।

আমাদের সকল দোষ ত্রুটি দূর করে দাও। আর নেট লোকদের সঙ্গে আমাদের মৃত্যু দাও।

হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশ্যে যখন দাঁড়াতেন তখন এ দোয়া পড়তেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের মোনাজাত

 

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত । তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজ মুমিনের মর্যাদার সোপান। রবের প্রিয় হওয়ার অন্যতম মাধ্যম। ফরজ নামাজের পরে তাহাজ্জুদ নামাজের স্থান। তাহাজ্জুদের মাধ্যমে পাপ মুছে যায়। আল্লাহর সঙ্গে তৈরি হয় বান্দার সরাসরি সম্পর্ক। তাহাজ্জুদ প্রাণহীন হৃদয়কে সজীব ও সতেজ করার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। কোরআন ও হাদিসের তাহাজ্জুদের অনেক ফজিলত বর্ণনা হয়েছে।

তাহাজ্জুদের নামাজের ফজিলত এর মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠ চারটি ফজিলত তুলে ধরা হলো।

তাহাজ্জুদ পাপ মুছে দেয় : হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা কিয়ামুল লাইলের প্রতি যত্নবান হও, কেননা তা, তোমাদের পূর্ববর্তী নেককারদের অভ্যাস এবং রবের নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম, আর তা পাপরাশী মোচনকারী এবং গুনাহ থেকে বাধা প্রদানকারী (তিরমিজি শরীফ)

তাহাজ্জুদ নামাজে দোয়া কবুল হয়: নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আল্লাহ তায়ালা রাতের শেষ তৃতীয়াংশে কাছের আসমানে অবতরণ করেন, এবং বলেন, কে আছো দোয়া করবে এবং আমি তার দোয়া সমূহ কবুল করব। কে আছো আমার কাছে তার প্রয়োজন সমূহ চাইবে এবং আমি তাকে দান করব। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা চাইবে এবং আমি তাকে ক্ষমা করে দিব (বোখারী শরীফ)

তাহাজ্জুদের নামাজ মর্যাদা বৃদ্ধি করে: মুমিনের মর্যাদা কিয়ামুল লাইল তথা রাতে দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় ও বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগির মধ্যে রয়েছে, আর তার সম্মান মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতার মধ্যে। (তবরানি)

তাহাজ্জুদ নামাজের জান্নাত লাভ করা যায়: নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই জান্নাতে রয়েছে এমন কিছু প্রাসাদ, যার বাইরে থেকে ভিতরের অংশ দেখা যাবে, ভেতর থেকে বাহিরের অংশ দেখা যাবে। এগুলো আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন, যারা মানুষকে খাবার খাওয়ায়, কোমল ভাষায় কথা বলে, ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখে, সালামের প্রশার ঘটায় এবং রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে যায়, তখন তারা দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে (মুসনাদে আহমাদ)

৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত । তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি কেউ তার কোন ইচ্ছা আল্লাহর কাছে পেশ করতে চায়, মহান আল্লাহ তাআলার থেকে কিছু খেতে চায় তবে সে যেন একটানা 40 দিন তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে তার নেক ইচ্ছা গুলো চায়। তাহলে অবশ্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার হালাল ইচ্ছাগুলো পূরণ করবেন। ( বুখারী শরীফ)

যারা শেষ রাতে এবাদত ও প্রার্থনা করেন তাদের প্রশংসা স্বরূপ কেয়ামতের দিবসে বলবেন তারা রাতে সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করে আর রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করে। তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ ঘুম থেকে জাগা, তার জন্য আমাদের সর্বোত্তম হলো এশার নামাজের পর ঘুমিয়ে পড়ে ভোর রাত্রে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা।

তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা । তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজের নির্ধারিত কোন সূরা নেই। তবে ফজিলত পূর্ণ সূরা গুলো তাহাজ্জুদের নামাজে পড়া উত্তম। ১২ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজের প্রথম রাকাতে সূরা আল ইখলাস বারবার দ্বিতীয় রাকাতে 11 বার ৩য় রাকাতে ১০ বার এবং চতুর্থ রাকাতে ৯ বার অনুসারে দ্বাদশ রাকাতে একবার পড়তে হয়।

আবার প্রত্যেক রাকাতে সূরা আল ইখলাস তিনবার অথবা একবার হিসেবে পড়া যায়। সূরা আল মোজ্জাম্মিল, আয়াতুল কুরসি এবং সূরা ইনশিরাহ ছাড়াও করা যায়।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম মিজানুর রহমান আজহারী ।তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনেকেই করেছেন অনেক আলেমরাই এ বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করে থাকে তবে এ সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর কন্ঠে তাহাজ্জুদের নামাজের বয়ান শোনা যায়। বয়ানটি শুনতে এই লিংকে ক্লিক করুন ।

মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ কোন ভেদাভেদ বা পার্থক্য নেই। মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম একই। দুই রাকাত করে মোট আট রাকাত নামাজ আদায় করতে পারলে ভালো, সময় না থাকলে শুধু দুই রাকাত আদায় করতে হয়।

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে হলে কমপক্ষে দুই রাকাত নামাজ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১২ রাকাত আদায় করতে পারবেন বা তার বেশিও আদায় করতে পারবেন। দুই রাকাত দুই রাকাত করে মোট আট রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারলে ভালো।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম FAQ: । তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

প্রিয় পাঠক বৃন্দ, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে আমাদের অনেক ছোট ছোট প্রশ্ন রয়েছে, যেগুলো এক একটি করে নিচে তুলে ধরা হলো।

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত

তাহাজ্জুদ নামাজের ধরা-বান্দা কোন রাকাতের নিয়ম নেই। তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে পড়তেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ নামাজ ৪ ৬ ৮ ১০ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ প্রমাণিত , তবে এর থেকে বেশি বা কম পড়াতেও কোন সমস্যা নেই যত নফল নামাজ তাই যত ইচ্ছা পরা যেতে। বরং বেশি পড়লে তা ফজিলতের কারণ।

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল

বিজ্ঞ আলেমদের মতে তাহাজ্জুদ নামাজের বিধান সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা বা নফল নামাজ। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ নামাজ ৪ ৬ ৮ ১০ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ প্রমাণিত , তবে এর থেকে বেশি বা কম পড়াতেও কোন সমস্যা নেই যত নফল নামাজ তাই যত ইচ্ছা পরা যেতে। বরং বেশি পড়লে তা ফজিলতের কারণ।

উপসংহার: প্রিয় পাঠক বৃন্দ, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে সকল তথ্য আশা করছি আপনারা জানতে পারবেন। কারণ এই আর্টিকেলটিতে আমরা তাহাজ্জুত সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করি।

পরিশেষে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here